Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

নামজারির নিয়মাবলী

প্রথমেই আপনাকে একটা বিশ্বাস রাখতে হবে তা হল, নামজারি একটি সহজ প্রক্রিয়া এবং আপনি নিজেই তা সম্পন্ন করতে পারেন। আরো বিশ্বাস রাখতে হবে, কোন প্রকার দালাল/ভূমিদস্যু/মুন্সী বা অন্য কোন মধ্যস্থতাকারীর সহায়তা ছাড়াই আপনি নিজেই তা করতে পারেন। এতে হয়তো আপনার কিছু সময় ব্যয় হবে কিন্তু আপনার বহু অর্থের অপচয় যেমন বন্ধ হবে তেমনি দালালদের অন্যায় আবদার কিংবা ভূমি অফিসের অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগান্তির সম্ভাবনা কমে যাবে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নিজে নামজারি প্রক্রিয়াটি বুঝতে যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে এসি ল্যান্ড সদর অফিসে একটি ‘হেল্পডেস্ক’ বা ‘সেবাকেন্দ্র’ খোলা রয়েছে। একজন দায়িত্ববান অফিস সহকারী সার্বক্ষণিক আপনাকে সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত আছেন। আপনার যে কোন সমস্যায় তিনি সহযোগিতা করবেন ।

তারপরও যদি কোন বিষয়ে আপনার অধিকতর জানার প্রয়োজন থাকে তাহলে আপনি সরাসরি এসি ল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না (০৭৪১-৬২৮২০)। আমরা বরং খুশী হবো।

 

এখন চলুন আমরা জানি নামজারি কীভাবে করতে হয়। প্রথমে আপনাকে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে যা নীচে দেয়া হল:
নামজারি করা কখন প্রয়োজন হয়:

• ভূমি মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নাম সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়; 

• জমি বিক্রি, দান, হেবা, ওয়াকফ, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;

• দেওয়ানী বা সিভিল কোর্টের রায় বা ডিক্রীমূলে মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারির আবেদন করা যায়।

 

নামজারি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

প্রথমেই জেনে রাখা প্রয়োজন, একটি পূর্ণাঙ্গ নামজারি আবেদনের জন্য আপনার নিচের কাগজপত্রগুলি থাকতে হবে:

• মূল আবেদন ফরম্ (ফরমটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন) (এটি বাধ্যতামূলক)

• ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্যও প্রযোজ্য) (বাধ্যতামূলক)

• সর্বশেষ খতিয়ান (যাঁর নিকট হতে জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাঁর খতিয়ান) (এটি বাধ্যতামূলক) [খতিয়ানের একটি ফরম্যাট দেখতে এখানে ক্লিক করুন]

• ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি (বাধ্যতামূলক)

• ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল ওয়ারিশন সনদ (শুধুমাত্র ওয়ারিশগনদের জন্য বাধ্যতামূলক)। এর সাথে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩B ধারা মোতাবেক কোন রেকর্ডিয় মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশগণ নিজেদের মধ্যে একটি বন্টননামা সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করবেন। উক্ত রেজিস্টার্ড বন্টননামাসহ নামজারির জন্য আবেদন জানাবেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য-বেশিরভাগ ওয়ারিশগণ এই নিয়মটি প্রতিপালন করেন না এবং ভবিষ্যতে সমস্যার মুখোমুখি হন। 

• জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যুকৃত) (বাধ্যতামূলক)

• ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (ক্রয়সুত্রে মালিক হলে বাধ্যতামূলক)

• বায়া/পিট দলিলের ফটোকপি (একাধিকবার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ যার নামে খতিয়ান হয়েছে তার পর থেকে সকল দলিলের কপি প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক)

• চলতি বঙ্গাব্দ (বাংলা সনের) ধার্যকৃত ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ (বাধ্যতামূলক)

• আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)

 

উল্লেখ্য, উপরোক্ত কাগজপত্রের সবগুলিই যে আপনার জন্য প্রয়োজন হবে, তা নাও হতে পারে। কোনভাবে আপনি মালিকানা লাভ করেছেন তার উপর নির্ভর করবে কোন্ কোন্ সংযুক্তি আপনার প্রয়োজন হবে। 

 

নামজারি আবেদনের পদ্ধতি:

যেভাবে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করবেন তা ধারাবাহিকভাবে নিম্নে বর্ণণা দেয়া হল:

১. আবেদন ফরমের সকল তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করবেন। বিএস খতিয়ান নম্বর বা বিএস দাগ নম্বর জানা না থাকলে আপনার সাথে যে খতিয়ানের উপরে লেখা আছে তা দেখে পূরণ করুন। আবেদন পূরণ হয়ে গেলে নীচে আপনার স্বাক্ষর এবং অবশ্যই আবেদনকারীর প্রকৃত মোবাইল নম্বর (যেখানে পরবর্তীতে আপনার মেসেজ যাবে) তা উল্লেখ করুন। এবার আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটি আবেদনপত্রের উপর সংযুক্ত করুন এবং অন্য সকল কাগজপত্র একত্রে সংযুক্ত করে হেল্পডেস্ক বা সেবাকেন্দ্রে জমা দিল। সেখানে আপনাকে একটি রশিদ দেয়া হবে এবং পরবর্তী তারিখগুলি জানিয়ে হবে। 

আবেদন ফরম ও নামজারি সংক্রান্ত নির্দেশিকা (নামজারি বিষয়ে সহজ ধারণার জন্য) ডাউনলোড করতে নীচের লিংকে ক্লিক করুন:

আবেদন ফরম ও নির্দেশিকা ফরম-

২. যদি এতেও আপনার কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে আমাদের হেল্পডেস্কে আসুন, সেখানে সকল প্রকার ফরম্, কোর্ট ফি (২০ টাকা) সহ মাত্র ২০ টাকায় প্রদান করা হয়। আপনার কাগজপত্র সঠিক আছে কীনা তাও প্রাথমিকভাবে যাচাই করা হবে। [আমাদের ফ্রন্টডেস্কের কর্মচারীদের সম্পর্কে ওয়েবসাইটে তথ্য ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে। আপনার দাখিলকৃত আবেদন পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট উপস্থাপন করা হবে এবং পরে তা সংশ্লিষ্ট ভূমি-সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার নামে অধিক পরিচিত) নিকট প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য পাঠানো হবে। 

৩. ভূমি-সহকারী কর্মকর্তা (ভূসক)’র নিকট আপনার আবেদন প্রেরণের ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন এসি ল্যান্ড অফিসে দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আপনি/আপনার উপযুক্ত প্রতিনিধিকে আপনার আবেদনে যেসব কাগজপত্র দাখিল করেছিলেন তার মূলকপি ভূসকের নিকট প্রদর্শনের জন্য এবং বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য যেতে হবে। উল্লেখ্য, ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া থাকলে বর্তমানে কোন নামজারি করা হয় না। 

৪. ভূসক কর্তৃক আপনার সকল কাগজপত্র যাচাইয়ের পর তিনি একটি প্রতিবেদনসহ এসি ল্যান্ড অফিসে প্রেরণ করবেন। এ পর্যায়ে আপনাকে আবেদন প্রাথমিকভাবে যথার্থ পাওয়া গেলে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষদেরকে নিয়ে শুনানীর জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। শুনানীর দিন কোন আপত্তি না পাওয়া গেলে সর্বশেষে তা এসি ল্যান্ডের নিকট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ভূসকের নিকট হতে এসি ল্যান্ড অফিসে নামজারির নথি আসার পর সর্বোচ্চ ২০ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার আবেদন অনুমোদন (যথার্থ থাকলে)

৫. আপনার নামজারির আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর খতিয়ান প্রস্তুতের জন্য ২ দিন সময় লাগে। কারণ এ পর্যায়ে রেকর্ড হতে অনুমোদিত হিসাব অনুযায়ী জমি কর্তন করা হয় এবং প্রস্তুতকৃত খতিয়ান স্বাক্ষর করার জন্য উপস্থাপন করা হয়। এই পর্যায়ে আপনাকে এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ) বা সহজ কথায় নামজারি ফি বাবদ ১১৫০ /- পরিশোধ করে খতিয়ান সংগ্রহ করতে হবে। 

এভাবেই আপনার নামজারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আশা করি বিষয়টি খুব কঠিন মনে হয় নি।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য
• উপরোক্ত নামজারি প্রক্রিয়াটির প্রতিটি পদক্ষেপ অনুযায়ীই বেশিরভাগ (প্রায় ৯০%) নামজারি মামলা সম্পন্ন করা হয়। তবে কোন কোন নামজারি মামলা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ/আপত্তি/দখল/দলিল/ওয়ারিশগণদের মধ্যে বন্টন সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন সম্ভব না-ও হতে পারে। এসব জটিলতার কারণে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে এসি (ল্যান্ড) এর নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে।
• একটি নামজারি প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য উপজেলার ক্ষেত্রে ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) কার্যদিবস সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে।
• নামজারির ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের হেল্পডেস্ক (সেবাকেন্দ্র) হতে সর্বমোট ২০ টাকায় সকল ফর্ম (কোর্ট ফি সহ) পাওয়া যায়। কাজেই এজন্য বাইরে অন্যদের নিকট হতে বেশি দামে ফর্ম বা কোর্ট ফি না কিনে এসি ল্যান্ড অফিস হতে নেয়াটাই বেশি সুবিধাজনক। 
• নামজারি অনুমোদন হয়ে গেলে খতিয়ান গ্রহনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি হল সর্বমোট ১১৫০/- টাকা।
• কোন প্রকার দালাল/ব্রোকার/মুন্সী ব্যতিত আপনি নিজেই নামজারির আবেদন করুন। প্রয়োজনে সরাসরি এসি ল্যান্ডের সাথেই কথা বলুন